সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০০৮

বিবিসি বাজার: মুক্তিযুদ্ধের অজানা কাহিনী ...

জায়গার নাম বিবিসি বাজার। তাই বলে জায়গাটা কিন্তু লন্ডনে নয়। এমনকি সেখানে কোন বেতার কেন্দ্র কিংবা বেতার উপকেন্দ্রও নেই। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ আর সেই যুদ্ধে বৃটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি)-এর গৌরবময় স্মৃতি ধারণ করে ধন্য আজকের বিবিসি বাজার। ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপূর বাজারের নাম হয়েছে বিবিসি বাজার। এই বাজারের নেপথ্য নায়কের নাম আবুল কাশেম মোল্লা।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রূপপুর এলাকাটি বেশ জঙ্গলাকীর্ণ ছিল। এর সন্নিহিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এবং পাকশী পেপার মিল- দুটোই ছিল পাকবাহিনীর বিশাল বহরে সজ্জিত।ঘন গাছগাছালিতে আচ্ছাদিত অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থান রংপুর কড়ই তলায় গ্রামের যুবক আবুল কাসেম মোল্লা এপ্রিল(১৯৭১) মাসের প্রথম দিকে একটি চায়ের দোকান দেন। দোকানে ছিল একটা থ্রিব্যান্ড রেডিও। যে সময়ে পাঁচ গ্রাম ঘুরে একটি রেডিও পাওয়া যেত না সেই সময়ে একটি থ্রিব্যান্ড রেডিওর মালিক হওয়া ছিল রীতিমত গর্বের বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের খবরাখবর শোনার জন্য তিনি বিবিসি ধরতেন। লোকজন কড়ই তলায় চা খাওয়ার নাম করে যুদ্ধের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পেত। তাদের আলোচনার খোরাগ যোগাত বিবিসির খবর। ধীরেধীরে লোকসমাগম বাড়তে লাগল। বেশিরভাগ লোকই আসত যুদ্ধের খবরাখবর শোনার জন্য। কয়েক মাসের মাসের মধ্যে লোকজন রূপপুর বাজারের নাম পরিবর্তন করে রাখল বিবিসি বাজার। স্বাধীনতার পর জায়গাটির নাম স্থায়ীভাবেই বিবিসি বাজার বলে পরিচিত পায়।
দেশ স্বাধীনের পর সারা জেলায় বিবিসি বাজারের কাহিনী ছড়িয়ে যায়। বিবিসি কতৃপক্ষের কানেও পৌছে যায় কাসেম মোল্লার বিবিসি বাজারের কাহিনী। ১৯৯২ সালে বিবিসির পঞ্চাশ বছর পূর্তি তাদের একটি দল বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান সফরে আসে। এই প্রতিনিধি দল বিবিসি বাজার পরিদর্শন করে। তাদের সম্মানে এলাকাবাসী প্রাণঢালা সংবর্ধনার আয়োজন করে। প্রতিনিধি দলও অনুরূপ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে।
স্বাধীনতার এত বছর পর বিবিসি বাজার চিনলেও অনেকেই জানেন না এর গোড়ার কথা। মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনগুলিতে যখন স্বাধীন বাংলা বেতার কিংবা বিবিসির অনুষ্ঠান শোনা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, রাজাকার-আলবদরের কোপানলে পড়ার সমূহ আশংকা ছিল, এই মহা আশংকার কথা জেনেও ভরা বাজারে বসে শুধু নিজেই শোনেননি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র কিংবা বিবিসির অনুষ্ঠান, অন্য শতজনকেও পৌছে দিয়েছেন সেই সংবাদ। এটা কি কম সাহস কিংবা দেশপ্রেমের কথা?


[পুরোনো কোন পত্রিকার একটা ছেঁড়া পাতায় লেখাটা পড়েছিলাম, সেখানে লেখকের নাম ছিল আমিনুল ইসলাম জুয়েল। সবার সাথে শেয়ার করলাম।]

2টি মন্তব্য:

১১ অক্টোবর, ২০০৮ এ ১২:১৩ AM -তে, Anonymous নামহীন বলেছেন...

Tarik vai deke valoi mone holo.
ta ki obosta.......
Asole dekte hobe na kar karukaj..
valo ...
carry on....

 
২২ আগস্ট, ২০১০ এ ৬:৪৮ AM -তে, Blogger Hasin Shadab Saikat বলেছেন...

salute u bhaia...vaggo valo kagoj ta amr hate pore nai.....amar hate porle ota dumre muchre jeto...!!!tai shomaje apnar moto manusher khubi proyojon jara akta kagoj keo tar prappo morjada dite jane!!!keep goin bhaia everyone is wid u.... :)

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এতে সদস্যতা মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন [Atom]

<< হোম