সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০০৮

মাদককে না বলুন... ...

১.
SSC, HSC-তে দুইবার Board Stand করার Brilliant Result নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম ভার্সিটিতে। বেশ ভালই কাটছিল দিনগুলো। পড়াশুনাটা খুব ভালই চলছিল প্রথম দিকে। কিন্তু আজ? হায়, এ আমি কি করলাম!!!
২.
স্কুলজীবন থেকে চলে আসা আমার আর নিনতার প্রেমটা ততদিনে বিশালত্বের রূপ নিয়েছে। ইস, দুজনের কত স্বপ্ন! জীবনটাকে তখনো খুব রঙিন মনে হত। ভার্সিটির এক-একটা দিন মনে হত এক-একটা স্বপ্নের মত। কিন্তু হঠাৎই এক হরতালে, বোমাবাজিতে নিনতা নিহত হল। আমার স্বপ্নের পৃথিবীতে নেমে এল চিরদিনের সূর্যগ্রহণ। বন্ধুরা কেউ কেউ বলল, "ভুলে যা ওসব, ভার্সিটিতে অমন হাজারটা সুন্দরী মেয়ে পাবি, নে ধর... ..." বিষণ্ণতা ভুলতে হাতে তুলে নিলাম ্ওদের এগিয়ে দেয়া সিগারেট। বাবা-মায়ের সমস্ত আদেশ-উপদেশ, স্বপ্নকে চুরমার করে; হারিয়ে যাওয়া নিনতার রেখে যাওয়া সমস্ত ভালবাসা উপেক্ষা করে, আমার সিগারেট ফুলে ফেঁপে মদের বোতলে পরিণত সময় লাগল মাত্র ছ'মাস। সময়-সুযোগমত সমাজের একদল সাধু-সন্ন্যাসীর কালোথাবায় মায়ের দেয়া পবিত্র কলমের জায়গাটা লুফে নিল কিছু ভারী অস্ত্র। সময়ের অল্প ব্যবধানে আমি হয়ে উঠলাম বোর্ডস্ট্যান্ড করা সন্ত্রাসী "স্ট্যান্ড তারিক"... ...
নিনতার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীটা আজও মনে আছে। সেদিনও হরতাল। অস্ত্র আর বোমা সহ আমি ধরা পড়লাম পুলিশের হাতে। কিন্তু টেলিফোন আর মোবাইলের কল্যাণে আমার জেলমুক্ত হতে সময় লাগল মাত্র তিনদিন। কিন্তু জেলের দুইটা রাতই আমার হৃদয়ে তুলে ধরল আমার ফেলে আসা দিনগুলি। বারবারই কেবল শুনতে পাচ্ছিলাম মা বলছে, "খোকা, এই কি তোর পড়াশুনা !" যেন নিনতার আত্মা আমায় ঘৃণায় ধিক্কার করছে, "ছি! এই কি আমার জন্যে তোমার ভালবাসা ?" আমি ভাল হবার পণ করলাম। সবকিছু ঝেড়ে ফেলে ছুটে চললাম বাড়ির দিকে। কিন্তু বাড়িতে আর ঢোকা হল না। কারণ, আমার সুকীর্তির চিত্রটা টেলিভিশনে দেখার পরমুহূর্তেই বাবা হার্টঅ্যাটাকে মারা যান। মা আমাকে দেখেই দূর থেকে চিৎকার শুরু করেন, 'এমন ছেলেই কি আমি গর্বে ধারণ করেছিলাম !!' কিছুতেই স্পর্শ করতে দিলেন না বাবার কবরটা। ছোটবোন আশা একটু কাছে এসে বলল, "ভাইয়া, তুই চলে যা। তোকে বেশিক্ষণ চোখের সামনে দেখলে হয়ত মাও হার্টঅ্যাটাক করবে।" আর দাড়িয়ে থাকার সাহস হল না। কলঙ্কিত মুখটা কোনমতে গোপন করে বেড়িয়ে এলাম বাড়ি থেকে। কিন্তু সমাজ আমার ভাল হবার সব ক'টা পথ ততকদিনে বন্ধ করে দিয়েছে। অবশেষে রাস্তার মোড়ে মোড়ে অর্ধউন্মাদ অবস্থায় ঘুরতে লাগলাম। আমার জীবন নদীর দু'কূলেই ভাঙন ধরল।
৩.
অনেক বছর পর, একুশে বইমেলার গেটে দাড়িয়ে ছিলাম অন্যমনস্কভাবে। হঠাৎ একটা মেয়েকে দেখে চমকে উঠলাম, পাশে দাড়িয়ে থাকা লোকটা বোধ হয় ওর Husband, আর সঙ্গের পিচ্চিটা মনে হয় ওর সন্তান। কাছে গিয়ে খুব জানতে ইচ্ছে করছিল, " আশা, মা কেমন আছে?" আমার ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে হাহাকার করে উঠল, কিন্তু পারলাম না। কারণ, পাশের ঐ লোকটা যখন জানতে চাইবে 'আমি কে'; তখন কী জবাব দেবে আশা??? তাই আজ সমাজের সকল ছদ্মবেশী সাধু-সন্ন্যাসীদের কাছে আমার অনুরোধ, "দয়া করে পবিত্র বিদ্যাপীঠগুলোকে কলুষিত করবেন না... ।" আর পৃথিবীর সমস্ত তারুণ্যের কাছে আমার আবেদন, "মাদককে না বলুন... ..."

লেবেলসমূহ: ,

1টি মন্তব্য:

২২ আগস্ট, ২০১০ এ ৬:৩৮ AM -তে, Blogger Hasin Shadab Saikat বলেছেন...

valo cilo...but apnar nam diye lekhar ki dorkar cilo!!!jai hok onek valoi laglo...keep it up bhaia!!!

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এতে সদস্যতা মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন [Atom]

<< হোম